Learn more
২০১৯ এর নভেম্বরে আমরা প্লান করি সেন্টমার্টিন আর কক্সবাজার ঘুরতে যাবো, যেই ভাবনা সেই কাজ। এই ভাবনা অনুযায়ী ডিসেম্বরের ২২ তারিখের টেকনাফ এর জন্য সৌদিয়া বাসের ৩ টি টিকেট কিনে ফেললাম। যদিও প্রথমে আমরা ৪ জন যাওয়ার কথা ছিল পরে আরও একজন বেড়ে যায় সে হলো আমার মা। পরে আমরা বাস কাউন্টারে যোগাযোগ করি আরও একটা টিকেট দিতে পারবে কি না তারা ঐ সময় না করলো দিতে পারবে না সব বোক হয়ে গেছে তখন আর কিছু করার ছিলোনা।
২২ তারিখ দিন টি ছিল শুক্রবার, সন্ধায় আমরা চিটাগাংরোড বাস কাউন্টারে পৌছে গেলাম তখনো বাস আসেনি তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হলো ৯ঃ৩০ pm পর্যন্ত। ৯ঃ৩০ pm এ সৌদিয়া বাস আসলে আমরা যার যার সিটে বসে পড়ি। সালমান সায়েম ছোট থাকায় বসতে সমস্যা হয়নি, সব যাত্রী উঠার পরে গাড়ি ছেড়ে দিছে। আমাদের ৫ সদ্যসের (মা, সালমান, সায়েম, সাইদুল, আমি) টিম যাত্রা শুরু করি। তারপর রাত বারোটার পরে কুমিল্লা চৌদ্দ গ্রাম বিরতির দেয়, সেখানে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে গাড়িতে উঠি।
আমাদের গাড়ি পরের দিন ভোর ৬ঃ০০ এ পৌছে গেল টেকনাফ , সবাই যার যার ব্যাগ নিয়ে নেমে পড়ি। আমাদের সিপ এর টিকিট আগেই কিনে রাখছিলাম দুই টা এখন আরও একটা দরকার তাই টিকিট কাউন্টারে গেছে কিন্তু টিকিট নিতে পারছে না। ঐখানে একজন এর সাথে পরিচয় হওয়াতে টিকেট নিতে পারছি সে আমাদের সেন্টমার্টিন এ থাকার হোটেল ও করে দেয় তার নাম হচ্ছে হামিদ। সিপ ছাড়বে ৯ টায় তাই সবাই বসে আছে কেউ বা ঘুরতেছে । পরে ৮ঃ৩০ AM আমরা সিপে উঠি ৯ঃ০০ AM তখন দোয়েল সিপ টি যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। আমরা মা কে ভিতরে বসিয়ে বারান্দায় যাই প্রকৃতি দেখতে। এত ঢেউ ছিলো সমুদ্রে যে তার তালে তালে আর সিপ এর গান এর তালে তালে সাদা অতিথি পাখি যেমন আনন্দ পাচ্ছে তেমন মানুষ গুলোও আনন্দ পাচ্ছে মনে হচ্ছে এ পাখি গুলো আমাদের জন্যই হেলে দুলে উরে বেড়াচ্ছে আর আমাদের দিকে এগুচ্ছে। আমরা আনন্দ করতে করতে প্রায় ৩ ঘন্টা পরে পৌছে গেলাম সেন্টমার্টিন।
আমাদের সিপ থেকে রিসিপ করতে হামিদ ভাই চলে আসে। এত ভিড় ছিল যার কারনে সিপ থেকে নামতে পারচিলাম না কার আগে কে নামবে সিপ থেকে সেই চেষ্টা। এক পর্যায় হামিদ ভাই সিপে এসে আমাদের লোকের ভিড় থেকে নিয়ে যায়। উনি আমাদের হোটেলে দিয়ে চলে যাওয়ার সময় বলে কোন প্রয়োজন হলে তাকে ফোন দিতে আর বিকেলে এসে ঘুরতে নিয়ে যাবে। আমরা ফ্রেশ হয়ে আদা ঘন্টার মতো আরাম করে দুপুরে খাবার খেতে চলে গেলাম।
আমাদের থাকার হোটেল এর কাছাকাছি ছিল খাবার হোটেল গুলো প্রত্যেক টা খাবার এর হোটেলেই মাছ আর মাছ যার যেই মাছ পছন্দ সেই মাছ অর্ডার করলেই ভেজে দিবে। আমরা কয়েক টা হোটেল ঘুরে একটা খাবার হোটেলে বসে খাবার অর্ডার করি। আমাদের পছন্দ মতো কিছু মাছ নিয়ে দুপুরের খাবার খাওয়া শেষ করি। খাওয়া শেষ করে কাছেই পাশে একটা সমুদ্র সৈকত আছে সেখানে যাই গিয়ে দেখি অনেক লোক আনন্দ করছে তাদের ফ্যামিলি নিয়ে ।
আমরাও নিজের মতো করে আনন্দ শুরু করি সালমান সায়েম সমুদ্র দেখে এত টাই আনন্দিত আমার মনে হয় তাদের অন্যকিছু দিয়েও এইরকম আনন্দ দিতে পারিনি। তাদের থামাতেই পারিনা তারা পানিতে নেমে যাবে খেলা করতে, তার বাবা নানু না করতেছে পানিতে যাওয়ার জন্য তখন প্রায় ৩ঃ০০ টার উপরে বাজে তাই। আমি তাদের আনন্দ টা দেখে না করতে পারলাম না তাই বললাম যাও ইনজয় করো। তখন তারা পানিতে নেমে কি যে হৈ হৈ করতেছিল আর এক ভাই আর এক ভাই কে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছিল বালি নিয়ে খেলা করতেছিল আর লাফাচ্ছিল তা দেখে আমরা তাদের কিছু ছবি উঠিয়ে রেখেছিলাম যাতে করে আনন্দটা ধরে রাখা যায়।।
সালমান সায়েম এর সমুদ্রের গোসল শেষ করে হোটেলে চলে গেলাম। রুমে কিছু সময় থেকে আবার বের হলাম, এখানে আর একটা কথা বলা হয়নি সালমান এর বাবার কলিগ জাবেদ ভাই ও আসছে সেন্টমার্টিনে । জাবেদ ভাই তার ওয়াইফ আর ছেলে সবাই মিলে বিকেলে ঘুরতে যাই সাথে হামিদ ভাই ও ছিল। সমুদ্রের পাশে খুব বাতাস, শীত করতে ছিল তাই শীতের জামা পরে ঘুরতেছিলাম সূয্য ডুবা দেখে কিছু ছবি তুলে নিলাম।
তারপর সমুদ্রের পার দিয়ে হাটা ধরছি সন্ধ্যা যত বারছে ততো যেন সমুদ্রের গর্জন বেড়ে চলেছে। সমুদ্রের এক পারে চুলা নিয়ে বসে একলোক পিয়াজু আর নারকেল পিঠা বানাচ্ছে সেখানে গিয়ে বসে কিছু পিয়াজু আর পিঠা কিনে খেয়ে আমার হাটা ধরি। হেটে পা ব্যাথা হয়ে গেছে আর হোটেল ও নাকি অনেক ধুরে তাই হামিদ ভাইকে বললাম রিকসা নিতে তারপর রিকসা করে হোটেলে চলে গেলাম।
হোটেলে এসে রেষ্ট নিলাম, রাতের খাবার সময় হইছে সালমান এর বাবা আমায় বলতেছে চলো কিছু সময় ঘুরে খাবার নিয়ে আসি। সালমান সায়েম ক্লান্ত হয়ে গেছে তাই বলল আমরা খাবো না তাই বললাম তাহলে ঘুমিয়ে পরো। মা বলল তোরা ঘুরা শেষ করে খেয়ে আমার জন্য কিছু নিয়ে আসিস আমি ও ঘুমাই কথা শেষ করে আমরা বের হয়ে গেলাম। বের হয়ে সমুদ্রের পারে গেলাম গিয়ে দেখি এতো মানুষ সেখানে প্রত্যেকটা ছাতার মধ্যে লোক বসে আছে । হামিদ ভাই তিনি সেখানেই ছিল আমাদের দেখে বলতেছে মালাই চা খাওয়াবো আসেন । চা ওলাকে বলল ভাই ভালো করে মালাই দিয়ে চা করে দেন মেহমানদের, হামিদ ভাই বলল এইখানের মানাই চা খুব মজা এক বার খেলে আবার খাবেন।
লোকটা আমাদের মালাই চা দিল মুখে দিয়ে দেখি আসলেই অনেক মজা। সেন্টমার্টিনে যারাই আসবেন মালাই চা টা খেতে ভুলবেন না। চা শেষ করে হামিদ ভাই বলল আসেন ছাতায় বসি এই ছাতার মালিক আমি নিজে আপনাদের যখন মনে চাবে এসে বসে থাকবেন। বসে অনেক গল্প করলাম হামিদ ভাইও অনেক গল্প করলো সে কি করে তার ফ্যামিলি নিয়ে। কথা শেষ করে হামিদ ভাই এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে খাবার হোটেল এর দিকে যেতেই জাবেদ ভাইদের সাথে দেখা তারা তার ছেলের জন্য সাইকেল ভাড়া নিচ্ছে চালানোর জন্য, তাদের সাথে আমরাও ঘুরলাম কিছু সময় । তারপর তাদের নিয়ে খাবার হোটেলে গেলাম খেতে আমরা মাছ ভাজা ,মাছের ভর্তা অর্ডার করলাম , খাওয়া শেষ করে মায়ের জন্য মাছ ভাজা আর মাছের ভর্তা নিয়ে রুমে যেতে যেতে রাত ১১ঃ০০। রুমে গিয়ে দেখি সবাই ঘুমায় মা কে জানালা দিয়ে ডেকে উঠালাম তিনি দর্জা খুলে দিয়ে হাত মুখ দুয়ে খেয়ে নিল তারপর আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম।
ভোর হতেই আমাদের ঘুম ভেঙ্গে গেল আমি আর সালমান এর বাবা মা কে বলে বাহিরে বের হলাম । দারওয়ান কে ডেকে গেইট খুলে বের হই সমুদ্র দেখার জন্য তখন ও অন্ধকার শেষ হয়নি । সমুদ্রে গিয়ে দেখি কেউ নেই দুই তিনটা কুকুর তখন ও ঘুমায় আমরাই প্রথম সমুদ্রে গেছি । আমরা ছাতায় গিয়ে বসি কিছু সময় কিছু ছবি ও তুলি। আস্তে আস্তে সকাল হলো আর মানুষ বারতে থাকলো সূয্যি মামাও যেন আমাদের দেখা দেয়ার জন্য সাগরের অন্য প্রান্ত থেকে উকি দিয়ে লাল হয়ে উঠা শুরু করলো। আবার সূয্যি মামাকেও ক্যামেরা বন্ধি করে নিলাম স্মৃতি হিসেবে। সূয্য উঠা দেখে হোটেল থেকে নাস্তা নিয়ে রুমে গেলাম।
নাস্তা শেষ করে জাবেদ ভাই কে ফোন দিলো ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়ার জন্য রেডি হতে সাথে হামিদ ভাইকে। হানিফ ভাই ৮ঃ০০AM এ স্প্রিট বোট এর কাছে যেতে বলল সেখানে গিয়ে বোট ভাড়া করবে । সবাই হাজির হলাম ঘাটে সেখানে বোট ভাড়া করলো ২৪০০ টাকা দিয়ে নিয়ে যাবে আর নিয়ে আসবে ।সবাই উঠে গেলাম আর বোট ছেড়ে দিল প্রায় আদা ঘন্টা পরে পৌছে গেলাম ছেঁড়া দ্বীপে বোট থেকে এক এক করে নেমে পড়ি। বোট থেকে নেমে দেখি অনেক সুন্দর সুন্দর পাথর মা কে আর সায়েম কে এক পাশে রেখে আমরা তিন জন পানির দিকে যেই পাথর গুলো আছে সেইখানে যাই । ঢেউ এসে বারবার আমাদের পা গুলোকে ভিজেয়ে যেন মজা পাচ্ছে। তারপর আবার অন্য দিকে যাই সেখানেও অনেক পাথর বালি শামুরে ভাঙ্গা টুকরা পরে আছে । ছেঁড়া দ্বীপ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পাথর, প্রবাল এবং নারিকেল গাছে পরিপূর্ণ। জোয়ারের সময় ছেঁড়া দ্বীপের এক-তৃতীয়াংশ সাগরের পানির নিচে তলিয়ে যায়। সাগরের নীল ঢেউ যখন পাথরের গায়ে আঁচড়ে পরে তখন এক মোহনীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়।
স্প্রিট ঘাটে যেতেই দেখা মেলে এক টং দোকানের। এখানে সারি সারি ডাব-নারকেল ঝুলিয়ে রাখা। আছে চা-বিস্কুট খাওয়ার বন্দোবস্তও। আর আছে কিছু চিপসের প্যাকেট ঝোলানো। ডানে-বাঁয়ে বা সামনে এই আধা কিলোমিটারের ওপর আছে বালু আর খাঁজকাটা খাঁজকাটা কিছু পাথর। পাথরের গায়ে লাগা শৈবাল যা সমুদ্রের গহিনে হাজার হাজার বছর জমে থেকে কঠিন পাথুরে রূপ ধরে বসে আছে। প্রায় আড়াই ঘন্টা ঘুরে একপর্যায় হেটে ক্লান্ত তাই ডাব খেয়ে নিলাম ডাব খেয়ে স্প্রিট বোট উঠে সেন্টমার্টিনে চলে আসি।
হোটেলে এসে মা কে রেখে আমরা গেলাম সমুদ্রে গোসল করতে সালমান সায়েম তো সেই খুশি আবার ও সমুদ্রে গোসল করতে পারবে শুনে। সালমান কে বললাম চলো কার আগে কে দৌড় দিয়ে পানি ধরতে পারে দেখবো সালমান সায়েম বলল ঠিক আছে। আমরা দৌড় শুরু করলাম আমি কিছুতেই সালমান সায়েম এর আগে যেতে পারলাম না। এক সময় আমি অনেক দৌড় দিতে পারতাম কিন্তু এখন আর পারিনা তারা আমার আগে পানিতে চলে গেল। আমি এক মুহুর্তের জন্য নিজেকে বাচ্চাদের মতো মনে করে নিয়েছিলাম। হেরে গিয়ে মনে হলো আসলে আমি তো এখন ছোট নয় দুই ছেলের মা হয়ে গেছি। সালমান সায়েম ঢেউ এর সাথে লাফাচ্ছে আর আমি ছবি তুলছি। বাবা ছেলেরা বালিতে গারাগুরি করে আমি তা ছবিতে দারণ করি। সায়েম শীতে কাপাকাপি করতে ছিল তার বাবা বলে বাবা তোমার কি শীত করতেছে ? সায়েম বলে না শীত করে না সে শীতের জন্য আনন্দ টা নষ্ট করতে চাচ্ছিল না তাই বাবা কে না করে দিছে । এক দের ঘন্টা গোসল করে সবাই হোটেলে চলে যাই।
হোটেলে এসে আমাদের ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে রেডি হই কারণ ঘাটে সিপ চলে আসছে আবার লাঞ্চ করতে বাকি আছে তাই আমরা সব নিয়ে এক বারে বের হলাম। আমরা হোটেল থেকে বের হয়ে দেখি খাবার হোটেল গুলো এত ভিড় ডুকার কোন অবস্থা নেই তার কারণ হলো সিপ এর লোক এসে গেছে। আমরা একটা নিরিবিলি হোটেল দেখে বসে গেলাম। কিছু মাছ আর ভর্তা ডাল নিয়ে খেয়ে সিপে চলে গেলাম । সিপে গিয়ে দেখি লোক ভরে গেছে তাই উপরে যায়গা পাইনি বাধ্য হয়ে নিচেই সিট নিয়ে বসতে হলো ।
আমরা সেন্টমার্টি থেকে টেকনাফ নেমে কক্সবাজার যাবো কিন্তু কক্সবাজার এর হোটেল ভাড়া করিনি। তা নিয়েই আমি মা আর সালমান এর বাবা চিন্তা ছিলাম যেতে যেতে রাত হয়ে যাবে রাতে হোটেল পাবো কি না? পরে সালমান সায়েম তার বাবা বসেনি বারান্দায় দারিয়ে আছে । আমি এক কোনায় বসে বাহিরে তাকিয়ে বসে আছি আর কিছু ভাবতে ছিলাম। তার মধ্যেই আমাদের সিটে এক জন মহিলা বসতে অনুমতি চাইলো মার কাছে মা বলল বসেন। মহিলাটি তার দুই মেয়ে আর এক ছেলের সাথে আসচ্ছে তারা খুব স্মাট দেখে মনে হলো।
মা আর মহিলা কথোপকথন
মহিলাঃ আপনারা এখন যাবেন কোথায়?
মাঃ কক্সবাজার যাবো
মহিলাঃ শুনে হাসি দিয়ে বলল আমরা ও যাবো ।
মাঃ ভালোই হলো এক সাথে যেতে পারবো।
মহিলাঃ আপনারা হোটেল নিছেন?
মাঃ না
মহিলাঃ আগে নিয়ে নিবেন না যেতে যেতে অনেক রাত হবে গিয়ে তো হোটেল নাও পেতে পারেন। আমরা আগেই নিয়ে নিয়েছি যাতে গিয়ে খুজতে না হয়।
মা আমায় তখন ডেকে বলল এই মহিলা ও আমাদের সাথে কক্সবাজার যাবে আমি বললাম ভাল।
আমার বেশি কথা পছন্দ না তাই আর কিছু বললাম না যা হওয়ার হবে।
তখন ও সিপ ছাড়েনি কয়েক মিনিটের মধ্যেই ছেড়ে দিবে। মহিলাটি তার মেয়ে কে বলতেছে আমার ব্যাগ দাও আমার ফোন নিবো মেয়ে বলল ব্যাগ তো তোমার কাছেই । মহিলা আল্লাহ ব্যাগ তো হোটেলেই রেখে আসছি এখন কি হবে আমার দুইটা ফোন আর ১০ হাজার টাকা এটিএম কার্ড এখন কি করে কক্সবাজার যাবো আর গিয়ে হোটেল ভাড়াই বা দিবো কোথায় থেকে? এই বলে মা মেয়ের মধ্যে রাগা রাগি হচ্ছে আর এদিকে সিপ ঘাট থেকে ছেড়ে দিয়েছে । যেই হোটেলে ছিল তাদের পরিচিত লোক আছে ঔ লোকটিকে ফোন দিয়ে ব্যাপার টা জানালো সেই লোক বলল এখন কি করে নিয়ে আসি সিপ তো ছেড়ে দিয়েছে। তখন লোক টা বলল আপনারা টেকনাফ কোথাও থেকে যান আমি কাল সকালের সিপে করে টেকনাফে নিয়ে যাবো আর কক্সবাজার এর টা ফোন দিয়ে বলে দেন কাল যাবেন।
সিপটি তখন ছেড়ে দিছে তারাও চিন্তা করতেছে হোটেলে ৫০০ টাকা দিলাম সেটাও না যানি হাঁড়াই। পরে মা কে মহিলা বলতেছে আন্টি আপনারা তো হোটেল নেননি আমাদের হোটেল টা আপনারাই নিয়ে নিতে পারেন। তাহলে আপনাদের ও ভালো হবে আমাদের ও উপকার হতো ? মা আমায় বলতেছে সব আমি বললাম সালমান এর বাবা বলে দেখি কি বলে। তাকে সব বলাতে সে রাজি হলো মহিলার ছেলের সাথে কথা বলে হোটেল এর ঠিকানা নিল ছেলের নাম্বার নিল ছেলেকে ৫০০ টাকা দিয়ে দিল হোটেল ভাড়া ছিল ৫৫০০ টাকা দুই রাতের। এক পর্যায় মহিলাদের সাথে আমাদের সবার ভাব হয়ে গেল সারা পথ গল্প করতে করতে টেকনাফ আসছি। সিপ থেকে নেমে আমরা রিলাক্স বাসের টিকিট নিয়ে কক্সবাজার চলে যাই।
সেন্টমার্টিন, ছেঁড়া দ্বীপ ঘুরে তার পরের দিন কক্সবাজার চলে গেলাম,কক্সবাজার ২ রাতের জন্য হোটেল নিয়ে উঠে গেলাম। রাত হয়ে যাওয়াতে কোথাও ঘুরতে যেতে পারিনি তাই ঘুমিয়ে পড়লাম, ভোরে ঘুম থেকে উঠেই কলাতলী বীচে চলে গেলাম আমরা ৫ জন। বীচে যাওয়ার সময় খেয়াল করলাম কক্সবাজার থেকে বান্দরবন প্যাকেজ ট্যুর যাওয়া যায় তখন মা বলল আসছি যখন বান্দরবন ও ঘুরে যাই। যাইহোক বীচে ঘুরা ঘুরি করে সকালের নাস্তা করে এক বারে হোটেলে চলে গেলাম। হোটেলে এসে খুব ক্লান্ত তাই একটু ঘুমিয়ে নিলাম, তার পর ঘুম থেকে উঠে গুসল শেরে নামাজ পরে দুপুরে খাবার খেয়ে বার্মিজ মার্কেটে চলে গেলাম। সেখানে কিছু কেনা কাটা করে সূর্য ডুবা দেখতে চলে গেলাম বীচে। বীচে সূর্য ডুবা দেখে বান্দরবন এর প্যাকেজ কিনতে চলে গেলাম টুরিস্ট অফিসে।
প্যাকেজে ছিল ৫ টি দর্শনীয় যায়গা দেখাবে তার মধ্যে হলো (মেঘলা, স্বর্ণ মন্দির, চিম্বুক হিল, শৈল প্রপাত ঝর্ণা,নীলগিরি) তারপর হোটেলে গিয়ে একটু রেস্ট করে আমি আর সালমান এর বাবা মিলে বের হলাম। সমুদ্রের ঢেউ এর গর্জন শুনার জন্য .১ ঘন্টার ছাতা ভাড়া নিলাম, তারপর সেখান থেকে উঠে রাতের খাবার নিয়ে হোটেলে চলে গেলাম। রাতের খাবার খেয়ে ঘুম দিলাম একটু তাড়াতাড়ি কারন ভোরে বান্দরবনের ঘাড়ি চলে আসবে ডলফিন মোরে। ঘুম না ভাঙ্গতেই ড্রাইভার এর ফোন চলে আসে তখন তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেস হয়ে হোটেল এর বিল দিয়ে চলে গেলাম ডলফিন মোরে, কিছুক্ষন পরেই গাড়ি চলে আসলো। আমরা গাড়িতে বসলে গাড়ি ছাড়ে তারপর মাঝ পথে আমাদের সকালের নাস্তা করায়।
১। তারপর আর কি প্রথমেই চলে গেলাম মেঘলা, ঢালু পাহার দিয়ে নেমেই মেঘলায় লেকের উপর দুটি ঝুলন্ত ব্রিজ রয়েছে। এছাড়া চিত্তবিনোদনের জন্য আরো আছে সাফারি পার্ক, শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা, উন্মুক্ত মঞ্চ, চা বাগান, ক্যাবল কার ও প্যাডেল বোট।। মেঘলা ঘুরে ঘুরে কিছু ছবি তুলে গাড়িতে চলে যাই, তারপর স্বর্ণ মন্দির এর পথে যাত্রা শুরু ।
২। আমাদের গাড়ি চলে এল স্বর্ণ মন্দির, বুদ্ধ ধাতু জাদি যা বান্দরবন স্বর্ণ মন্দির নামে সুপরিচিত।এটি স্বর্ণমন্দির নামে পরিচিত পেলেও এটি স্বর্ণ নির্মিত নয়। মূলত সোনালী রঙের জন্যেই এটির নাম হয়েছে স্বর্ণমন্দির। গাড়ি থেকে নেমে পাহারে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা শুরু করলাম পর্যটকদের এত ভীর ছিল মন্দিরে যেতে প্রারায় ১৫ মিনিট এর মতো লেগে গেছে। তারপর টিকিট নিয়ে মন্দিরে দর্শন করেছি। তবে মন্দিরের মূল অংশে অর্থাৎ যেখানে জাদিটি আছে সেখানে সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। সন্ধ্যা ছয়টার পরে মন্দিরে সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষেধ। স্বর্ণ মন্দিরে আমাদের .২ ঘন্টার মতো দেরি করাইছে গাড়িওলারা কারণ নীলগিরি যেতে চাঁন্দের গাড়ির ব্যাবস্থা করতে পারেনি তাই।
.৩। স্বর্ণ মন্দির ঘুরা শেষে নীলগিরির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। একপর্যায় গাড়ি গিয়ে পৌছালো চাঁন্দের গাড়ির কাউন্টারে। আমাদের বাসের সব লোকের জন্য চাঁন্দের গাড়ি নিল ৫ টি প্রত্যেকটিতে ১৩ জন করে নিয়ে আঁকা বাঁকা রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে দুপুরে খাবারে সময় হয়ে গেছে । পাহারের চূড়ায় একটা হোটেলে গাড়ি থামিয়ে খাবার খাওয়ায় মেনুতে ছিল ভুনা খিচুড়ি আর চিকেন ভুনা সেই টেষ্ট। খাওয়া শেষে আবার আঁকা বাঁকা চিকুন রাস্তা দিয়ে চাঁন্দের গাড়ি উপরে উঠা শুরু করলো । এক ফুট নয় দুই ফুট নয় ২২০০ ফুট উঁচু উপরে উঠা শুরু করছি যত উপরে যাচ্ছে তত বাতাস আর শীত বারতেছে। একপর্যায় ২২০০ ফুট উঁচু উপরে অবস্থান নিল ৫ টি গাড়ি।নীলগিরি পাহাড় চূড়াতেই রয়েছে সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র গুলোর একটি নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র। সবাই এক এক করে ঘাড়ি থেকে নেমে পাহাড় এর দৃশ্য দেখা শুরু করি। সবুজ পাহাড় মেঘের লুকোচুরি যে কাউকে এর রুপ দিয়ে বিমোহিত করে রাখবে যদি সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ২২০০ ফুট উচ্চতায় মেঘ ছোঁয়ার ইচ্ছে থাকে তাহলে নীলগিরি আপনার সেই ইচ্ছে পূরণ করবে।
নীলগিরি থেকে চারপাশে চোখ মেলে তাকালে সারি সারি মাঘের পাহাড়ে আছড়ে পড়া ও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য আপনাকে বিমোহিত করবে। নীলগিরির চূড়া থেকে পাহাড়ের সারির পাশাপাশি আকাশ পরিস্কার থাকলে আপনার চোখে পড়বে বগালেকটিও। মেঘ আর পাহাড় দেখতে দেখতে কোন সময় সন্ধ্যা হয়ে গেল বুঝতেও পারলাম না তাই আর সময় নষ্ট না করে গাড়িতে উঠে যাই। আবার ও আঁকা বাঁকা চিকুন রাস্তা দিয়ে পাহাড় এর নিচে নামতে শুরু করলো চাঁন্দের গাড়ি।
রাত হয়ে যাওয়াতে আমাদের আরও দুইটি স্থান (চিম্বুক হিল, শৈল প্রপাত ঝর্না) দেখা হয়ে উঠেনি।
চাঁন্দের গাড়ি সরাসরি বান্দরবন শহরের দিকে যাচ্ছিল কিন্তু শহর থেকে কিছু দুর আগে গাড়ির তেল শেষ হয়ে যায়। আর সেখানে তেল নেয়ার কোন ব্যাবস্থা ছিল না আমাদের পিছনে আর একটা গাড়ি ছিল সেটা দিয়ে একজন শহরে গিয়ে গাড়ি নিয়ে আসে। তারপর সেই গাড়ি দিয়ে আমরা শহরে পৌছাই ।তারপর চাঁন্দের গাড়ির কাউন্টারে এসে সবাই বাসে করে কক্সবাজারে উদ্দ্যেশে গাড়ি ছাড়বে আর আমরা কক্সবাজার না গিয়ে ঢাকা যাবো বলে নেমে যাই । কিন্তু নামার পরে দেখি আমাদের ব্যাগ নাই আগের গাড়িতে ফেলে রেখে আসছি । তখন আমাদের যে গাইড দিয়ে নিয়ে গেছে সে অন্য একটা গাড়ি করে ব্যাগ টা এনে দিল।
রাস্তায় ডলফিন গাড়ির কাউন্টারে নেমে গেলাম ঢাকায় চলে আসবো তাই। গাড়ি থেকে নেমে
ডলফিন গাড়ির টিকিট নিয়ে বসে আছি গাড়ির জন্য, একপর্যায় গাড়ি আসলে সিট নিয়ে বসে যাই আমরা ৫ জন। অনেক ক্লান্ত তাই গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়ি, এক সময় সম্ববত কুমিল্লা চার রাস্তায় হোটেলে এসে ঘাড়ি থামে বিরতির জন্য। রাত প্রায় ২ টা হবে গাড়ি থেকে নেমে হাত মূখ দুয়ে কিছু খেয়ে আবার ঘাড়িতে উঠে যাই এক টানে গাবতলী এসে বাস থেকে নেমে সি এন জি নিয়ে বাসায় চলে আসি।
এই হলো আমাদের কক্সবাজার টু বান্দরবন এর ট্যুর এর বিস্তারিত।